Wednesday, March 2, 2011

রাতের সাইকেলে চৌরাস্তার দিকে আমি

ওসব পেছনে ফেলে আসি
বিদ্যুতে বিদ্যুতে তবু তোর চিঠি খুঁজে ফিরি আজও
এমন-ই এ রাত নামে
গাঢ় হয় তৃষ্ণা আমার
ঘুম নামে জ্যোৎস্নার পথে
শুধু মন্ত্রের মতো, শুধু শব্দের মতো এগিয়েছি
রাত্রির সাইকেলে চৌরাস্তার দিকে আমি
সবকটা কষ্টই কেঁদে ফ্যালে তখনই এমন
প্যাডেল বিফল ঘুরে যায়।
এমন রাতে আমি শুধু একা, একান্ত আওয়াজ
যদি চিৎকার ক'রে কাঁদি,
ঘুম ভেঙে কেউ শুনবেনা
যদি হাহাকার করি
যদি হাহাকার করি তোর নাম ধ'রে
মেঘে মেঘে ঘষা খেয়ে উবে যাবে
চাঁদ-ঘ্যাঁষা কান্না আমার।

আমি ঘটালাম এক অভিজ্ঞতা

আমি ঘটালাম এক অভিজ্ঞতা
তখন দুপুরের উচ্চারণ
ড্রইং শিটের ভিড়ে জমে ওঠে শীতকাল
প্রাপ্তবয়স্ক শহরেতে
গঙ্গার পাড় ধরে ভেসে যায় পিকনিক
আর, আমি বসন্তে এসে পড়ি,
কলেজেও উৎসব পড়ে
কাঁচঘুরে ক্লাসঘরে ভেসে আসে ব্যান্ডের গান
একলা মাঠের বুকে এমনই হলুদ রোদ্দুর
আর ঘুরপথ ক্যান্টিন খোলা হাওয়ায় মাতামাতি সব
আমের বোল আসে ঝিরঝির বিকেলপাড়ায়
সেইসব মুকুলের ফুটে ওঠা রাস্তা বিঁধিয়ে
এরকমই ঋতুরোগে মিছিলে সামিল হয়ে গেছি।

তারপর অভিজ্ঞতা, বেঁচে থাকে যেমন মানুষ
বেঁচে ওঠা যেমন হয় রিকেটে খোঁড়ানো পা নিয়ে,
এখনও লড়াই চলে
এখনও লুকোনো কুঠুরিতে
ফিকে হওয়া তুলোট কাগজের ভাঁজে আঁকড়িয়ে ধরা থাকে
গুঁড়োগুঁড়ো সবুজ পরাগ
মহীরুহ হয়ে ওঠা গাছ
ছবির দেশের মেঘমালা আর ক্যামেরা হারানো ম্যাসাঞ্জোর
কিম্বা হীরাকুঁদে রুকস্যাক

তারপর জ্বলে ওঠে পিয়ানোটা
এখনই আসর শুরু হবে,
অথচ অভিজ্ঞতা ইতিপূর্বে বলে দিয়ে গ্যাছে,
এরপর ঠিক কী কী হবে
কীরকম হতে পারে,
কোথায় কতটা আনচান- তলপেটে ব্লিজার্ড কখন;
আর সেই মিছিলের রাজপথে, মহাসড়কেতে
যুদ্ধের সব ক্লাসরুমে
বেহালা বাজিয়ে যায় নির্বাসন
মেট্রোর একলা পাতালে, শিউলিফুলের মত
ঝরে পড়ে অভিজ্ঞতা সব।

Tuesday, March 1, 2011

পুরাতনী

সবই তো পুরোনো হয়ে আসে
ঝিকমিকে রোদ্দুর, বিকেলের ফিকে হওয়া আলো
বিপন্ন চোখে চোখে মায়ারা যে স্বপ্ন বসালো
কী সহজে তারাও ফ্যাকাশে

মিছিলের উত্তুঙ্গ দাবি
শহরের রাজপথে জনরোষ, লড়াকু নিশান
ভোর আসবেই ভেবে ভিতরের ঘুমভাঙা গান
সে স্লোগানও অস্তস্বভাবী

খুঁজে পাওয়া সূর্যের দেশ
রাতের দেওয়ালে ছিল সেই স্বপ্নের ছবি আঁকা
বিষাদের বুক নিয়ে গঙ্গার ঘাটে একা একা
আজ তার ধ্বংসাবশেষ

এসবই ফুরিয়ে গ্যাছে শোনো
হলুদ ছবিরা আর অ্যালবাম, কবিতার বই
রাত নেমে এলে আমি তোর নাম ধরে চ্যাঁচাবোই
সেই নামও অতীব পুরোনো

ফেরা

এ শহর সবকিছু জানে
কোনও এক মানবীর তরে হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে
রক্তের অবিরাম স্রোত
নিয়তি যেমন, বয়ে যায়
একলা রাতের বাসস্ট্যান্ড - ভীড় বাস
লাস্ট ট্রেনে বাড়ি ফেরা, মেট্রোর মত তীব্রতা
আর পথের বাঁকের মোড়ে
অপেক্ষা, শহরের মতো
বাইপাসে একলা হেঁটেছি, শীত শেষ হলে দেখো
দুপাশের লালফুল-রাধাচূড়া-ধুলোধুলো বসন্ত মাখে
আর সেই রক্তের স্রোত
নিয়তি যেমন, বয়ে যায় -
বাস কমে, ফুটপাথে উঠে আসে মানুষের বাস
রাস্তা একলা হয়ে পড়ে।

নতুন পাতার সেই ঘ্রাণ- ছায়াপথে
কুয়াশা সরালে সব প্রকাশ হয়ে যাবে
তবুও এখন,
এখন দুহাত পেতে ভিক্ষে করছি উষ্ণতা,
সম্বল হারিয়েছি তোর সাহচর্যে যা যা ছিলোঃ
গরমভাপের মতো, ঘোরাপথে নিঃশ্বাসবায়ু,

এই শীতকালে আমি একলা থাকার চেয়েও
একা--

এখনও কলকাতা

এখনও কলকাতা- তুই জেগে
ঘুমে ও স্বপ্নের সংবেগে
এখনও পথে বাসে ভিড় জমাট
কক্ষপথ থেকে বাড়ায় হাত
দিনের শেষে এই ঘুমের রেশ
ক্লান্ত মুখে তোকে লাগছে বেশ
এখনও এই পথে রাত কি দিন
ভাবনা হাঁটে সেই সঙ্গীহীন
নিঝুম বাসস্ট্যান্ড অপেক্ষায়
স্বপ্ন ছুঁতে আমি নিঃসহায়।

এদিকে বৃষ্টির স্তম্ভেরা
আরও দূরে সরে ঘর-ফেরা
কুয়াশা, সাদা হওয়া সবুজ মাঠ
জানলা ভিজে ওঠে মেঘলা ছাঁট
ও মাঠ পেরিয়ে আরও দূরে
পথে ও ঘুরপথে গোল ঘুরে
কোথায় রাখা বাড়ি, কলকাতা?
ঘরের অভিমুখে পথ হাঁটা
সে পথ হারিয়েছে রাত এলে
একলা রাস্তার সাইকেলে।

শব্দ রাখা মানা, গভীর রাত
অন্যপথ জুড়ে চাঁদের হাট
হাটের মাঝে জ্বলে - অ্যামেরিকা
ডিগ্রি-ডলারের স্বস্তিকা
রোদের চড়া সুরে উচ্চারণ
রক্তে হৃদয়ের প্রস্রবণ
ভেসেছে, কলকাতা কোথায় তুই
আমিও একা একা রাত্রি ছুঁই
আরও গাঢ় রাতে হুইসেলে
ঘরের ফেরার এক ট্রেন মেলে
সে ট্রেন ছেড়ে আসে চাঁদের হাট
কলকাতার বুকে বৃষ্টিপাত
ভিজবো বলে আমি কান্না হই
একলা হারাবার ভরসা কই?
ভরসা, হারিয়েছি - আমার ঘর
কতদূরে তুই, তোর শহর।

এস এস সি

এখানে আমার পরীক্ষার সিট পড়েছিল
শহর থেকে যে সরণী সরোবর আভিমুখে যায়-
ভিড় বাজার আর পসরার ফুটপাথ ঠেলে
গলির গোপনে গলি জেগে থাকে, সেই পথ ধ'রে
-- একটা স্কুলবাড়ি,
তার সামনে মাঠ,
অন্ত্যেবাসীর করতল ছোঁয়া
এমনই বিবর্ণ কিছু দেওয়াল আর দেওয়ালের লেখা
ছোট বেঞ্চ, ক্যাঁচক্যাঁচে শব্দের পাখা,
এসবই সইয়ে নেওয়া।

এখানে আমার পরীক্ষার সিট পড়েছে,
আর সামনের উঠোনে, ঘুণধরা দর্জার চৌকাঠে
জুতো ঘষতে ঘষতে আমি, অপেক্ষা করছি তোমার

নির্বাসনে

সত্যিরা বড়ো বেশি বাস্তব
একটা সত্যি এসে আর সব দিন মুছে দ্যায়
আলোর ঝল্ক এসে পড়ে
সামনের পথ দেখি শুধু আরও দূরে সরে গ্যাছে
আর শুধু দূরে দূরে রাখা থাকে
গাছেদের ছায়া, স্বপ্নমায়ার মতো সেই কোনও মৃদুল বাতাস
পূবালি গন্ধ বয়ে আনে

তোর ছবি ফিকে হয়ে আসে
শুধু স্বপ্নের ঘোরে তীব্র ভীষণ বেদনায়
ঘুমের পরিধি জুড়ে নীল রঙ আরও গাঢ় হয়।