Wednesday, June 17, 2009

পার্কস্ট্রীট

মেয়েটা প্রথম স্কুল পালিয়েছিলো
বন্ধুরা তোরা কেউ ঠিক বুঝেছিলি?
বাড়িতে কারুর-ই জানবার কথা নেই
সেদিন প্রথম রোদ্দুর উঠেছিলো।

ছেলেটাও তাই ইস্কুলে যায়নি
এর আগে শুধু একদিন-ই সিনেমায়
সেদিন তো সব বন্ধু-ই গিয়েছিলো
বাড়িতে কি রোজ সবকথা বলা যায়?
বন্ধুরা, তোরা পাসনি খবরটাও
জানুয়ারী শেষে বসন্ত হাওয়া দিলো।

এক একটা দিন ক্রুসেড জেতার পর,
রবীন্দ্রনাথ, আমরা সবাই রাজা
অতো সকালে তো মেট্রো চলেনা, তাই,
ভিক্টোরিয়ায় যাওয়ার ইচ্ছে হ’লো।

এর পরে থাক গল্পের বাকিটুকু
স্বপ্নের দেশে ডটপেন চলাচলে
ইচ্ছে মতন শেষ থাক, শুরু থাক
দরকারে থাক এখান থেকেই চলা,

দু’পাশে থাকুক ঘুমভাঙা পার্কস্ট্রীট
ব্যস্ততা নিয়ে জাগছে অফিস পাড়া
ইস্কুলে এই পড়া শুরু হ’লো ব’লে –
ফুটপাথে থাক হকারের সম্বিৎ

রাস্তায় থাক সাদারঙ বিদেশিনী,
জিজ্ঞাসু চোখ খুশির শহর খোঁজে
ক্যামেরার লেন্স খুশি হতে সেইদিন
ফোকাস করলো, স্কুলকাটা ভালোবাসা?

কেউ-ই জানেনা গল্পের শেষকথা
কবিতার বুকে বিগ-ব্যাং আছে, থাক
গাছের পাতায় সবুজ রঙের নেশা,
নেশা-নেশা ঘোর এটুকু-ই বলে দিলো
এই পথ ধ’রে পথ হাঁটে কলকাতা -

Sunday, May 31, 2009

তৃতীয় পুরুষ

বন্ধুর দিকে দুটো হাত বাড়িয়ে ধ’রেছি
বাকি সব কথা ভুলে যাচ্ছে মন
দ্যাখো, এখনো অন্যরা সুযোগ মত হাতের পাতায়
ঘটনা পরম্পরা লিখে যায়
আর, এই তটে
পাড়-ভাঙা স্তব্ধতা –
মাটির কাছে, ঘাসের ভিতর সমস্ত বিছিয়ে দিয়েছি
যদিও আমার কাছে কোনো গল্পই ছিলনা,
চুম্বকগুলো সব জমে হিমবাহ হ’ইয়ে গ্যালো।
ওদিকে দ্যাখো,
নষ্ট সময় সন্ধ্যে এলে আরও একলা হ’য়ে পড়ে
অথচ এই সব ছেড়ে দেবো ব’লেই তো
হাত তুলি বন্ধুর দিকে,
বিকেলের ক্যান্টিনে –

না হয় আমার কোনও গল্প নেই কোনও গানও নেই
তবু, কবিতার শেষে কেন একটু নাচেরও অবকাশ থাকবে না!
আবারও সেই ভরসায়
বন্ধুর দিকে দুটো হাত বাড়াই আর,
সবকিছু নষ্ট হ’য়ে আসে
মাথার ভেতর চাষের জমি খরায় ফেটে অঠে
লাঙল সত্যিই বেড়িয়ে যায় মুঠোর থেকে
আর, সমস্ত দিন হার স্বীকারের পর
তখন, সময়েরও ঘেন্না করে।

Tuesday, May 26, 2009

Thermodynamics

A synopsis of the first Thermodynamics course taught in Jadavpur University in second year curriculum for Bachelor of Mechanical Engineering


Properties of pure substances, change of phases :

ধর্মে কিছু মিল খুঁজে নিই মানুষ এবং গ্যাসে,
পাগলামির এ প্রস্তাবনা পাঠক্রমেই আসে।
গ্যাস শুধু নয় - সবাই যারা চাপ ফেরাতে জানে,
অংক বোঝে, বড়ো কথা, হিসেবগুলো মানে।
শুদ্ধ থাকে, প্রাণপণে তাই, সূত্রে যত বলে
এদিক ওদিক বাওয়ালি হয়, বুক বাঁচিয়ে চলে।
আমরাও তো প্রায় অতটাই গুণে সাধারণ
এত কিছু কাটিয়ে এলাম, চমকালো না মন।
অ্যাই ছেলেরা, হিসেব ক'ষে বসবি ঝিলের ধারে -
(হিসেবগুলো, মেয়ে দেখলে, আওয়াজ দিতে পারে?)
প্রশ্নপত্র বাতিল রাখি, কবিতা নামুক
ভর-টিফিনের ক্যান্টনেতে, আবছা কোনো মুখ।
থাকলাম তাই, অর্থ মেনে পুরোটা কঠিন
ভোর ছোঁয়ালে তরলমতি - গললো নতুন দিন।
হঠাৎ লাগে অন্য বাতাস, সেই কি তোমার ছোঁয়া?
ফুটে ফুটে বাষ্প হলাম - এবার পুরো হাওয়া -
প্রথম দিন, প্রথম বার, গুছিয়ে ঝাঁরি মারা
অ্যাই বেতমিজ, কত দেখছিস! এবার চোখ সরা -
চোখ সরালাম, পথ হারালাম মন সরাতে গিয়ে
ফ্রাস্টু-কাব্য তাই লিখে যাই স্বপ্নের ভুল নিয়ে।


First law: Heat given = work done + change in internal energy

তোমাকে ভালোবেসে আগুনও জ্বলে ওঠেঃ
সবকিছু জিতে আমরা এগিয়ে যাবো -
রাস্তা ফুরোলে রাসপূর্ণিমা পাবো,
মিষ্টির রেশ যেমন রেখেছো ঠোঁটে,

আগুনের আঁচ তোমাকে বদলে দিলো;
আরও কাছে এলো স্বপ্নিল অবয়ব
কাজের গোপনে কমলো রক্তচাপ,
ইকুয়েশনের দুটো রুট আসছিলো।

"এমনিতে আমি প্রায়ই লুকিয়ে দেখি
তোমার হিয়ায় আমার ছায়া কি ভাসে
এত দ্রুত কেন বিকেল ফুরিয়ে আসে
স্বপ্ন তোমাকে ছোঁয়ার জন্য রাখি"

অঙ্ক বলছে হারায় না কোনো মজা -
সব ঠিক থাকে,অংক সূত্র মানে।
শক্তির খোঁজ পাই সূর্যের টানে -
চাকা চালিয়েছি চাঁদের দিকেই সোজা।


Second law: Entropy of an isolated system which is not in equilibrium will tend to increase over time.

বুকের ভেতর ঝলসে ওঠে জ্বালিয়ে দেওয়া খিদে;
গরম মোচড় গা খাটিয়ে কাজ করিয়ে নেয়
(সময় খোঁজে সুযোগ মতন শরীর নিয়ে খেলা)
টের পাইনি কাজের ফাঁকে ইচ্ছে পালটে গেল।

সেমিস্টার ফুরোলে তাই সময় খুঁজে নিই;
যোগ বিয়োগে মিলিয়ে যাই লাভের পরিমাপ
এ সেকশন বি সেকশন ড্রয়িং মেলেনি,
প্রথম পরীক্ষাটার দিল চোতাতেই গরমিল-

রিপোর্ট তৈরী ক'রতে গিয়ে নষ্ট ল্যাবশিট,
কাজ হারিয়ে ছিঁড়ে গেছি, নষ্ট নোংরামি-
তোমার জন্য বর্ষাদিনেও একলা পুড়তে এসে
এখন কেবল চিনেছি তোর নীল জিনস্‌-এর ব্যাগ।

এর পরেতেও অনেক দুপুর ঝিলের জলে ডোবে,
মদনমোহন মুরলীধরণ শ্যামলবরণ হই
বুকের বাঁশি বেপথু সুরে, চন্দ্রাবলী কই?
ল্যাদ কাটাতেই সবচে' বেশি কষ্ট হয়েছিলো।


Irreversibility: Irreversible work done = entropy generation multiplied by ambient temperature = loss of available energy


আগুন জ্বালিয়ে রাখি,
কেবল তোকেই ডাকি,
ইশারায় দিবিনা কি উত্তর?

ভরসা খোঁজার দিন
চারপাশ উদাসীন
দু'চোখে রঙের নেশা- সুন্দর।

এখন তোকেই চাই
একথা জানাবো তাই
রেখে যাই স্বপ্নের আহ্বান

স্নানে পৌরুষ মেখে
তোর চোখে ছোঁয়া রেখে
ক্ষেতভরা যুদ্ধের সন্ধান।

বন্ধুত্বের ফাঁকে
ভেতরে লুকিয়ে রাখ,
হাসিটাও মুখে চেপে রাখ না।

পুরোটাই হেরে গিয়ে
কুলমান সব দিয়ে
গোকুলের গোপিনীর কান্না-

বাইরের উষ্ণতা
খোঁজেনি কোথাও ব্যথা
বেড়ে চলে বন্ধুর বিচ্ছেদ,

তোর নেশা বুক ভ'রে
উথালপাথাল করে
ভুল ছিল কবিতার সংকেত-


Thermodynamic Relationships: Entropy and enthalpy are related in any particular choice of control volume.

দিন ফুরোলে ঘুমের ঘোরে তোকেই খুঁজে যাই
দুচোখ আলোয় আঁকড়ে ধরে রাতের অভিমান,
অন্য যখন, মনের ভুলে হারিয়ে যেতে চাই-
অন্তরকে আঁকড়ে রাখে বন্ধু সবার টান।

সেম্‌-এর আগেই সাপ্লির ভয় অবসেশনে থাকে,
মাঝখানে দ্যাখ মস্তিগুলো মুখ ঘুরিয়ে যায়;
সময় যখন ডাকে,
নদীও তাই নাচতে শেখে, পাগলি তুই কোথায়?

আমার চোখের সামনে দেখি তোমরাও বদলাও
মাঠের ঠেক কাটিয়ে তখন রঙের চুক্তি হবে,
সেদিন কোথায় ভাসাই আমার হীনন্মন্যতা-গো,
এই আকাশের আলোয় আলোয় আমার মুক্তি কবে?

বিপন্নতার বিষাদ বাজে অনেক হৃদয় ঘিরে
তোর দু'চোখে ঝলসে উঠুক সবার সূর্যোদয়
সন্ধে এলে ফিরে-
লিখবো আমি চিরন্তন উত্তরণের জয়।।

এখানে

লালমাটি লাল-আকাশ আরও কতো কাছে এসে পড়ে
পথের দুপাশ ঘিরে সাদা হওয়া কুয়াশার জাল
ক্যাকটাস ফুটিয়েছে, কাছাকাছি বৃষ্টির ঢাল
আদিবাসী গ্রামটাও দুপুরের মায়ায়, আদরে –

এখানে অলস দিন ক্ষেত ছেড়ে ধরে চারপাই
ভিতরে আগল ঠেলে মুরগীটা বসেছে লাঙলে
অবাক শিশুরা আজও বিস্ময়ে বাস গুনে চলে
এই পথে যত নদী – আমি ভাবি সকলই কোপাই

অপার সবুজ জুড়ে লাল টিলা ঢিল ভাঙা মাঠে
চাহনি সীমানা ছেড়ে বিষণ্ণে বুক ছুঁইয়ে থাকে
চলার সামনে বসে তুমি দ্যাখো ওকে, না আমাকে
বাসের জানলা ধরে কবি ও কবির গান হাঁটে।

ডাইরী

পাহাড়ে মেয়েরা মেঘের মতন হয়,
অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমঘোর আঁকড়ে রাখে,
রোদ বোঝা গেলে সকাল সাজিয়ে দেয়
সবুজ সবুজ গাছ আঁকা,
ঠান্ডা কামড়ে – আহ্লাদের মতোই
প্রবল চুমুর মতো ভোরের চায়ের তৃষ্ণায়
ঠোঁট ফেটে ওঠে অসময়ে –

বেলা বড়ো হতে থাকে
নরম শরীরের মতো হাওয়া
সব মুছিয়ে দিচ্ছে
ডানদিক বাঁদিক, কুয়াশার পর্দায়
সবুজ গাছগুলো, ভিজে রাস্তা –
মেয়েদের ইস্কুল, দু-একটা নার্সারী
জংলা পাতাবাহার।

হঠাৎ মারুতির হর্ণে মনে হয়
ছবি তুলতে গেলে এক তৃতীয়াংশ মেঘ রাখা ভালো
বাকিটা গাছ আর রাস্তা, আর
ঝিঁঝিঁর ডাক আর মারুতির শব্দও,

তারপর বেলা আরও প্রৌঢ় হয়
দিন পড়ে আসে
দূরের আবছা বরফ আবছা নদী আরও ম্লান হয় –
ক্যাম্পফায়ারের মতো সন্ধে জ্বলে ওঠে
হোটেলের বন্ধ ঘরে।
পাহাড়ের গায়ে গায়ে মেয়েদের গন্ধ –
বরফের তীব্রতা নেয়।

আস্তে আস্তে রাত ঘন হয়ে এলো
মেঘ রোদ বৃষ্টি সমস্ত সরিয়ে দিয়ে
আমার স্বপ্ন আঁকড়ে ধ’রেছে
তোমার বাঙালী অবয়ব।

সংস্কৃতি – ২০০০ (১)

ইংগিত পাইনি কোনও
এতটা সংজ্ঞা ছিলোনা, যে,
স্বপ্নসংখ্যা গুনে বুঝে নিতে পারি সত্যির সংকেত
তবু উদাসী হাওয়ার সঞ্চারে
সমীপবর্তী হয়ে উঠি – আরও

অথচ, বীতস্পৃহা সঞ্চয় করবো ব’লে তো
এগোইনি এতদূর নিঃসঙ্গতার পথে,
সন্ধ্যা নিবিড় হয়, স্তম্ভে আলো জ্বলে ওঠে
দক্ষিণের সংরাগ,
আমরা আরও সংগতিহীন হই,
শুধু কি সম্পর্কেই সিক্ত হতে চেয়েছিলাম
সংকটের দিন?

স্তব্ধতা সহ্যের অতীত হলে সঙ্গী খুঁজে চলি,
অথচ বন্ধুরা,
কেউ তো আসেনি সন্তাপ লঘু ক’রে দিতে
কেবল শঙ্কার রাত
বিস্তীর্ণ হয়েছিলো দেখি।

আমি অতি সংগতিহীন
সংগ্রহে সূর্যরাগও ছিলোনা যে,
সত্যি থেকে প’ড়ে নেবো স্বপ্নের সংকেত।

স্তিমিত হই না তাও, সংশয়ে –
সন্ধির হাত বিস্তৃত করি, আর, সঞ্চয়ের সবটুকু
সমাপ্তির পথে নিভে যায়।
স্বপ্নের শেষটাও সংগীতে সংগৃহীত হ’লো;

নিসর্গে সন্ধে আসে, একা থাকি আমি
ফাঁকা মাঠে,
স্বর্গছেঁড়া সব বৃন্তে পীড়ন-ই প্রেরিত হয় শুধু
সুন্দরকে দেখে চলি সুপ্তির অবকাশে – শেষে,

এই পথ ধ’রে তুমি হেঁটে গ্যাছো উৎসবের দিকে।

জেনারেশন নেক্সট

এই পথ ধ’রে ওরা প্রেম করা শেখে
এই গলিগুলো – কানাগলি, খোঁড়াগলি
অন্ধগলিতে রাতে কোনো আলো ঢুকতে পারেনা
একটু প্রবীণ যারা বাঁকা মুখে পাশ দিয়ে যান,
পাড়ার মা কাকিমারা – উত্তম সুচিত্রার বেজাতে বিয়েতে হাততালি দিয়ে যান এখনো
মাঝেমাঝে দিল-সে, দহেক;
আর নীতি নির্ধারকেরা নিরূপায় হয়ে বলবেন-ই
ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা ছ্যা – পাড়াটা বৃন্দাবন হলো শেষকালে

এই পথ ধ’রে ওরা প্রেম করে
কেঊ বলে অভিসম্পাতও বরণীয়
অদ্ভূত সৌভাগ্য এখন-ই হয়েছে কারও কারও
অনেকের হাত না ঘুরিয়েও নাড়ু
অনেকের-ই ফূর্তি তিনমাস –
যারা যারা ভ্যাবা গঙ্গারামী, কেঁদে ফ্যালে ঘরের এককোণে
বাকিদের কেঊ কেঊ বিপ্লবে আসবেই, দেখো।

এই পথ ধ’রে ওরা হাত ধ’রে হাঁটে
ইঁটপাতা গলি আর পিচের রাস্তা ধ’রে
বড়ো রাস্তার বাঁক, চৌরাস্তার মোড় ঘুরে
পাড়া বেপাড়া শহরতলি ঘুরতে ঘুরতে
আমার শহরটা বড়ো হয়ে ওঠে।

ফেরা

আমার চলার পথ এটা নয়
এই মাঠপথ, ক্ষেতপথ, ধানপথ কোনোটাই নয়
এমনকী পাহাড়ের গা-বেয়ে চড়াই উৎরাই গানগুলো,
দুপাশে জঙ্গলে তোর ওড়নায় মিশে যাওয়া –
ঝাঁঝালো ফুলের গান, কোনও দিশা দ্যাখালোনা দ্যাখ

জলের ছোঁয়ায় এসে পাথর ও নিশানা হারায়
অলক্ষ্য থেকে দেখি
তোর চোখে সূর্যের লাল, আমার নতুন লেখা
লাল দিন আনবে তো ঠিক? পথের বাঁকেতে এসে
ছুঁড়ে দেওয়া কবিতার ভাগ
বস্তুনিষ্ঠ কোনো সমাধান এইটাও নয়।

নরম রাস্তা ধ’রে জলের জন্য হেঁটে যাওয়া
ওপরে মেঘের খেলা
এগোনোর সীমানা দেখায়
বাঁধের সামনে এসে সব নদী স্থির হয়, আর,
আমাদের মাঝখানে কলকাতা শেষতম বাধা

মনে জঙ্গল নয়ে কেন তুই জাগবিনা?
বল –
আমি সব ফেলে আসি –
গান কবিতা ও মৌনতা
পাথরের ঢালে শুয়ে আড়চোখে
তোর চোখ দ্যাখা,
নদীর, নুড়ির বুকে
আকাশের মতো মিশে যাওয়া,

এখন স্বপ্ন তার শেষ অর্থের উল্লাসে
চোরকাঁটা থেকে তোকে হাত ধ’রে আলপথে তুলি।

কলকাতা – আগস্টে

স্বাধীনতা দিবসেও ফুটপাথে ল্যাংটো ছেলেটা
মৌলালি মসজিদ জামা খুলে বিছানা পেতেছে
এখানে আজান হয় প্রতিদিন সন্ধে-সকালে
রাত গাঢ় হ’লে রোজ সত্যিই নবী নেমে আসে
তখন তো শহরের সভ্যেরা ঘরে, ঘুমঘোরে
রিক্ত রাস্তা ধ’রে একা একা হাঁটে সমকাল
উপচানো ভ্যাট ঘেঁটে সে বুঝেছে খিদেটাও ক্ষত
দূরপাল্লার বাস এই সব ছেড়ে চলে যায়
আমরা কাগজ পড়ি, বস্তুত লজ্জাবশতঃ


রয়েড স্ট্রীটের থেকে বাঁক ঘুরে এ্যাংলোপাড়া-টা
প্রথম ট্রামের মতো সংগতি মোড় ছেড়ে গ্যাছে
এখন একলা দিন ঘরে ঘরে পর্দার ফাঁকে
বিষণ্ণ মন জানে এ রাস্তা একাই হাঁটার
পায়ের তীব্র ক্ষোভে ভাঙা ইঁটে শট মেরে চলা
আচমকা পোষ্টারে খুঁজে দেখা রোগ নিরাময়
কলেজের সারি ধরে ভর্তির নোটিশ টানানো
ভালোবাসা ভুল ভেবে যে ছেলেটা রাস্তায় একা
শহর দেখলো তার মুখটাকে, আয়নার মতো


রাস্তা পিচের ফাঁকে জল পেলো আবার বাঁচার
গলি ভ’রে ছাতা ওড়ে লুকিয়েছি আমরা এখানে
তেতলার টবে ফোটে দোপাটির প্রথম কুঁড়িটি
আজকে চাষের দিন, বন্ধুরা বাইপাসে চলো
সবাই সবুজ মাখি আলপথে, জল ছপছপে

তবুও আসেনা কেউ, পড়ে থাকে কাদা মাখা রাখি
কলকাতা কেঁদে ফেলে, মুখ গুঁজে আমার কাঁধেতে
ডিস্কোর ঠেক ছেড়ে তুমি নেমে আসোনি এবং
মহানাগরিকও তাকে ফেলে রেখে চলে গ্যাছে দূরে।

এ শরীরে অন্য কোথাও

এ শরীরে অন্য কোথাও
কবিতা রয়েছে কিনা জানিনা-
তবুও মুগ্ধতা নিজের ভেতর থেকে
গুঁড়ি মেরে ওঠে।
ওগো তরুলতা, ডাল মেলো, পত্র মেলো।
অন্য কাউকে বলবোনা,
সামাজিকীকরণের প্রশ্নই রাখিনি কখনো,
শুধু এর-ই মধ্যে
অন্তর্দহনের চিতা সাজিয়েছি।

# # #
এই গল্প আমি তোমাকে দিতে পারবোনা
অথচ, এটা কি ঠিক হবে, মন?

# # #
মনের দোহাই দিয়ে আর সব সরিয়ে রেখেছি
এ শরীরে অন্য কোথাও কবিতা থাকলেই বা কী?
স্বপ্নের আগে আমি
তোমাকেই ঘুমিয়েছি-
ফ্যাশন টিভি-র মেয়ে

শহরের মধ্য দিয়ে

পহলে আপ

কিছুকিছু উত্তর এরকম-ই থাকে
প্রশ্নটা শুধুমাত্র প্রসঙ্গের অবতারণা
তবু এক পক্ষের কাছে আরেকটি সত্ত্বা
নিঃসংকোচ হতে পারেনা –
আভাসের আবরণে
বক্তব্য ঢাকা প’ড়ে যায়
দুদিকেই চলে অপেক্ষার
প্রতিধ্বনি –
‘ঠিক সময়-টা আর কবে চিনে উঠবো আমরা?’
শেষ পর্যন্ত উত্তর দেওয়া হয়ে ওঠে না
-ইংগিতেও
সকলকে বিমূঢ় করে রেখে
গাড়ি ছেড়ে দেয়।


ওয়ার্ল্ড কাপ

কনভেন্ট রোড – লোরেটো স্কুলের সামনে
অপ্রশস্ত পরিসর
স্ট্রীট-লাইটের আলোয় নৈশ ক্রিকেট খেলছে
রেলইয়ার্ডের কালোপ্যান্ট, ছেঁড়া গেঞ্জি, খালি পা
ছেলেগুলো-
সৌরভ গাঙ্গুলী বাঁহাতি ব্যাটের মর্যাদা
বাড়িয়ে দিয়েছেন
অন্ততঃ কলকাতার বুকে সেরকমই।
ছ’সাত বছরের অপুষ্টি বুকে নিয়ে
বল করতে আসছে
উইকেট প্রমাণ দৈর্ঘ্যের, হাতের জোর
নগণ্য
বলটা তিনড্রপ খেয়ে স্কুলের পাঁচিলে ধাক্কা খাবে
তবুও তুমি প্রার্থনা কোরো, ছেলেটার বল যেন
ঠিকমতো ব্যাটে পাওয়া যায়।



চাবুক

প্রেমিক প্রেমিকা দুজনে হাঁটছে
এরকম আলো-অন্ধকারের রাস্তাই ভালো
স্বপ্ন দেখাতে সুবিধে হয়- অনেকটাই
তাই,
প্রেমিক প্রেমিকা দুজনে হাঁটছে

মেয়েটা আজ একটু বেশী – ই উচ্ছ্বসিত
অনেক প্রতিশ্রুতি – অনেক প্রতিজ্ঞায়
ছবি আঁকা তাদের – পরিকল্পনার
চলার দৃপ্ততা তাই জানালো উত্তেজনা
এ দিন কেন্দ্রে রেখে চলছে আগামী দিন গোনা

প্রেমিকার হাত চঞ্চল হয় আরও
সেই আগামী-কে যদি সে দেখতে এখনই পেতো
সময় তো আসলে একটা ঘোড়া-ই
আমরাই তার পিঠে চেপে ঘুরি,
আমরাই তাকে ঘোরাই –

তাই, চলে যাওয়া বাস থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে
একবার দেখে নিই –
মেয়েটার দৃঢ় মুঠি, চঞ্চল হাতে
আগামীর রাশ।


ফিরলাম

অবশেষে ভি আই পি রোডে
দুদিকের সবুজ – এই অন্ধকারেও বোঝা যাচ্ছে –
বাড়ির সমীপবর্তী হচ্ছি
বাড়ি – বাবা, মা – বিছানা – ঘুম।
আজ সন্ধেবেলা একটা রূপোলী তারা
চাঁদের খুব কাছে এসে পড়েছিলো
আমার অনেকটাই ভন্ডামী – তাও,
একটু পরেই স্বপ্নে তোমার সঙ্গে দেখা হবে।